প্রদীপ চট্টোপাধ্যায় ( জামালপুর ) : রাস্তা তৈরি নিয়ে তৃণমূল পরিচালিত গ্রাম পঞ্চায়েতের বিরুদ্ধে নজিরবিহীন দুর্নীতির অভিযোগ আনলেন তৃণমূলেরই পঞ্চায়েত সদস্যরা।শুধু অভিযোগ আনাই নয় ,অনিয়ম ও দুর্নীতির সবিস্তার উল্লেখ করে পূর্ব বর্ধমানের জামালপুর ২ পঞ্চায়েতের সাত জন সদস্য প্রশাসনের সর্বস্তরে অভিযোগ জানিয়েছেন। এই ঘটনা প্রকাশ্যে আসতেই শোরগোল পড়ে গিয়েছে প্রশাসনিক মহলে।
জামালপুর ২ পঞ্চায়েতের বিরুদ্ধে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ এই প্রথম উঠলো এমনটা নয় ।সরকারী প্রকল্পের কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করে নেওয়ার অভিযোগে ২০১৮ সালে গ্রেপ্তার হয়েছিলেন এই পঞ্চায়েতের ভিএলই পদের কর্মী সুকান্ত পাল ওরফে ফুলকুমার ও তাঁর স্ত্রী ঋষিতা পাল । দু’জনেরই ঠাঁই হয় শ্রীঘরে।এর পরবর্তী সময়ে পঞ্চায়েতের আরও দুই কর্মী সুপ্রতিত দত্ত ও অরিন্দম রায়ের বিরুদ্ধেও সরকারী কাজে অনিয়ম করার অভিযোগ ওঠে ।পঞ্চায়েত দপ্তর অরিন্দম রায়কে সাসপেন্ড করে । সুপ্রতিত দত্তকে জামালপুর ২ পঞ্চায়েত থেকে সরিয়ে দিয়ে তাঁর বিরুদ্ধে ডিপার্টমেন্টাল এনকোয়ারি শুরু করে পঞ্চায়েত দপ্তর। এবার জামালপুর ২ পঞ্চায়েতের সাত জন সদস্য পঞ্চায়েতেরই প্রধান ,উপপ্রধান ,শিল্প পরিকাঠামো সঞ্চালক সহ অফিসের আধিকারীক ও কর্মীদের বিরুদ্ধে দুর্নীতি ও স্বজনপোষনের অভিযোগ আনলেন । যা নিয়ে তুমুল শোরগোল পড়ে গিয়েছে জামালপুরের রাজনৈতিক মহলে । জামালপুর ২ গ্রাম পঞ্চায়েতের মোট সদস্য সংখ্যা ১২ জন। তারমধ্যে তৃণমূলের প্রতিকে নির্বাচিত সদস্য ১১ জন। একজন বিজেপির সদস্য ।তারমধ্যে তৃণমূলের সাতজন সদস্য তাঁদের সই শিলমোহর দেওয়া অভিযোগ পত্র ‘পাঠিয়েছেন ব্লক, জেলা ও রাজ্য প্রশাসনের নবিভিন্ন মহলে । সাত পঞ্চায়েত সদস্য প্রশাসনের কর্তাদের লিখিত ভাবে জানিয়েছেন ,“সরকারী নিয়মকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে জামালপুর ২ পঞ্চায়েতে এলাকায় একাধীক রাস্তা নির্মান করা হয়েছে । ওই রাস্তা নির্মানের কাজের কোন টেন্ডার হয়নি ।সরকারী নিয়ম অনুযায়ী রাস্তা নির্মানের কাজ শুরুর আগে কাজের জায়গায় প্রকল্প সংক্রান্ত বোর্ড লাগানো বাধ্যতা থাকলেও তা মানা হয়নি । কাজের কোন মাস্টার রোলও তৈরি হয়নি । সাত পঞ্চায়েত সদস্যের আরও অভিযোগ অতিব নিম্নমানের বালি, সিমেন্ট ও পাথর দিয়ে ওই সব রাস্তা তৈরি হয়েছে । ওই সব রাস্তাগুলি দু’তিন মাসের মধ্যে নষ্ট হয়ে যাবার সম্ভাবনা রয়েছে । এই গোটা ঘটনায় পঞ্চায়েতের প্রধান ,উপ প্রধান ,শিল্প পরিকাঠামো সঞ্চালক সহ আধিকারিক ও কর্মীরা জড়িত বলে সাত সদস্য প্রশাসনের কাজে অভিযোগে জানিয়েছেন ।অভিযোগের এখানেই শেষ নয় ।“ সাত সদস্য আরও অভিযোগ করেছেন ,“পঞ্চায়েতের বিভিন্ন সংসদ এলাকায় নিয়ম বহির্ভূত ভাবে ১০০ দিনের কাজ হচ্ছে । ডাঙা সংসদে কমিউনিটি হল ও কালভার্ট নির্মানও সঠিক ভাবে হয়নি । সরকারী অর্থ তছরুপের একটি গোষ্ঠী পঞ্চায়েতে তৈরি হয়েছে বলে সাত সদস্যের অভিযোগ ।’ এই সাত সদস্য কিছুদিন আগে দলীয় স্তরেও চিঠি দিয়ে অভিযোগ করেছিলেন ,‘বিজেপির এক সদস্যের সমর্থন নিয়ে তৃণমূলের কয়েকজন জামালপুর ২ পঞ্চায়েতের বোর্ড চালাচ্ছে । যারা বোর্ড চালাচ্ছে তারা পঞ্চায়েতের তৃণমূলের বাকি সদস্যদের গুরুত্ব দিচ্ছেন না ।’
যদিও পঞ্চায়েত প্রধান মনিকা মুর্মু এইসব অভিযোগ মানতে চাননি ।তিনি দাবি করেন,’ সব মিথ্যা অভিযোগ । আমার পঞ্চায়েতে কোনও দুর্নীতি নেই।’প্রধান এমনটা জানালেও অভিযোগ জমা পড়ার পর উপপ্রধান উদয় দাস বলেন , “রাস্তা নির্মান হয়েছে ঠিকই । তবে রাস্তার কাজের সঙ্গে পঞ্চায়েতের কোনও সম্পর্ক নেই। পঞ্চায়েত থেকে রাস্তার কাজের কোন টেন্ডার হয়নি, কাউকে কাজের বরাতও দেওয়া হয়নি।“ অপর দিকে শিল্প ও পরিকাঠামোর সঞ্চালক বাচ্চু মাঝির বক্তব্য ,
“পঞ্চায়েত নয় ,গ্রামবাসীরাই অর্থ খরচ করে তাঁদের এলাকায় পাকা রাস্তা তৈরি করে নিয়েছে । রাস্তা তৈরির নির্দেশ পঞ্চায়েত দেয়নি । তাই রাস্তা তৈরি নিয়ে পঞ্চায়েতের বিরুদ্ধে অভিযোগ তোলারও কোন মানে হয়না । বিশেষ উদ্দেশ্য নিয়ে এইসব অভিযোগ আনা হচ্ছে । “যদিও জামালপুর ব্লক তৃণমূলের কার্যকরী সভাপতি তথা পঞ্চায়েত সমিতির সদস্য প্রদীপ পাল জানিয়েছেন , ‘রাস্তার কাজ নিয়ে যে দুর্নীতি হয়েছে তা ধরা পড়ে যাবার পরেই পঞ্চায়েতের কর্তারা এখন উল্টো সুর গাইছে। আর পঞ্চায়েতের কর্তাদের কথায় অর্থ খরচ করে যারা রাস্তা তৈরি করেছেন তারা এখন চোখের জল ফেলে দিন কাটাচ্ছেন ।‘ বিডিও শুভঙ্কর মজুমদার স্পষ্ট জানিয়েছেন, “পঞ্চায়েত ওইসব রাস্তা তৈরি করায়নি বলে আমাকে জানিয়েছে । কাজেই
ওইসব রাস্তার নির্মান নিয়ে পঞ্চায়েতের কোন দায় নেই ।কেউ যদি যেচে কোথাও রাস্তা নির্মান করে থাকে তার দায়ভার পঞ্চায়েত নেবে না । “এই বিষয়ে জামালপুর বিধানসভার বিজেপি কনভেনার জীতেন ডকাল বলেন , “তৃণমূল পরিচালিত পঞ্চায়েত গুলি আশলে যে দুর্নীতির আখড়া তা প্রমান করে দিলেন তৃণমূলের নেতা ও পঞ্চায়েত সদস্যরাই । একই সঙ্গে জীতেন বাবু বলেন ,পঞ্চায়েতের কর্তাদের কথাতেই প্রামাণ হয়েগেল তৃণমূল পরিচালিত পঞ্চায়েত গুলি এলাকার উন্নয়নে ব্যর্থ । তাই গ্রামবাসীদেরকেই অর্থ খরচ করে রাস্তা তৈরি করে নিতে হচ্ছে ।